শুরুর কথাঃ
প্রেমের গল্প লিখতে শুরু করেছিলাম, কিভাবে যেন অপরাধের দিকে চলে গেল। গল্পের মূল ভাবনা বাস্তব জীবন থেকে নেওয়া, যদিও কাহিনী আমার নিজস্ব। গল্পটি লিখতে গিয়ে ভাল লেগেছে, সেই ভাল লাগাটা পাঠকের সাথে ছড়িয়ে দিতেই প্রকাশ করলাম। যেহেতু আমার শুরুর দিকের লেখা, অনেক ভুলত্রুটি থাকবে স্বাভাবিক। পাঠক ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন এটাই প্রত্যাশা।
রিয়া একবার ভেবেছিল পালিয়ে যাবে। সাহস হল না। বয়স ১৭। এই বয়সের মেয়েদের বিপদ অনেক। বছর খানেক আগে রিয়ার বান্ধবী পালিয়ে গেল। প্রেমিকের সাথে । কিছুদিন পর বান্ধবীর লাশ পাওয়া গেল। বসিলা ব্রিজের নিচে। এরপর থেকে আর পালিয়ে যাওয়ার কথা ভাবে না। রিয়া তাই নিজের ঘরেই ফিরে এল। বাড়িতে রিয়ার ভয় একটাই। ওর বাপ । হারামজাদা মাতাল, লম্পট। কাজ কাম কিছু করে না। বউয়ের আয়ে সংসার চলে। এখন মেয়েরও আয় করা লাগবে। মেয়েকে তাই কাজে দিয়ে আসে। ধানমন্ডির বিশাল বাড়ি। ছেলে মেয়েরা সব বিদেশ চলে গেছে। অসুস্থ মা একা একা থাকে। রিয়ার কাজ ছিল সেই বুড়ির দেখাশুনা করা। ভাল বেতন। টাকার লোভেই রিয়ার বাপ দিয়ে আসে। কিন্তু রিয়ার ভয় করে। একা একা। বিশাল বাড়ি। বুড়ি সবসময় অজ্ঞান থাকে। যখন জ্ঞান থাকে তখন গালাগাল করে। রাতে ভূতের ভয়ে ঘুম আসে না। রিয়া তাই কাউকে কিছু না বলে চলে আসে। যাবে না আর ওই বাড়ি। দরকারে বাড়িতে বাপের মাইর খাবে। তাও ভুতের ভয় রিয়ার সহ্য হয় না।
রিয়ার মা কিছু বলল না। রাতে গার্মেন্টস থেকে এসে রান্নাঘরে ঢুকে গেল। কাল সকালে উঠে কাজে যেতে হবে। রান্না শেষ করে ঘুমুতে হবে। বেশি কথা বলার সময় নেই।শুধু বললেন রাতে ঘুমানোর সময় দরজা আটকিয়ে ঘুমাতে। নাইলে রিয়ার বাপ গায়ে হাত তুলতে পারে। বাপের আবার গায়ে হাত তোলার অভ্যাস। কথায় কথায় গায়ে হাত তোলে। রিয়ার মাকে মারে অনেক। সারাদিন গার্মেন্টসে কাজ করে আসে। রাতে এসে স্বামীর হাতে মার খায়। রিয়া একবার বলেছিল, মা তুমি এই হারামিটাকে ছেড়ে চলে যেতে পার না? কামাইত নিজেই কর। তবু কেন চুপ করে মার খাও? মা বলেছিল, পুরা দুনিয়াটাই খারাপ জায়গা। ছেড়ে আর কই যাব? মার খাওয়া গা সয়ে গেছে। রিয়া আর কিছু বলে না।
আজ রাতটা সাবধান থাকতে হবে।ঘরে এসে যদি দেখে রিয়া ফিরে এসেছে তাইলে রেগে যাবে। এত গুলো টাকা হাতছাড়া। ইতিমধ্যে রিয়াকে পাঠানোর নাম করে অনেকগুলো টাকা নিয়েছে। সেই টাকা নিশ্চয়ই জুয়া খেলে শেষ করে ফেলেছে। তারা টাকা ফিরিয়ে দেবার জন্য চাপ দেবে। ওর বাপেরত আর টাকা নাই। রিয়াকে কাজে ফেরানো ছাড়া আর কোন উপায় নেই। রিয়াকে মেরে হোক, ধমকে হোক কাজে ফেরাতে চাইবে। রাতের বেলা মাতাল হয়ে ফিরবে। মাথা গরম করে কি করবে না করবে তার ঠিক নেই। রিয়া দরজা আটকে বসে থাকে। গভীর রাতে বাপ বাড়ি ফেরে।ফিরে বুঝতে পারে রিয়া ফিরে এসেছে। কিন্তু কিছু বলে না। থমথমে পরিবেশ। রিয়া দম বন্ধ করে শুয়ে থাকে। এই বুঝি দরজায় লাথি মারে। শুরু হয় গালাগাল। কিন্তু কিছু হয় না। রিয়ার মনে হল বাপ বুঝি খাওয়া দাওয়া শেষ করে ঘুমিয়ে পড়েছে।ঝামেলা মিটে গেছে। রিয়া ঘুমানোর চেষ্টা করে। ঠিক তখনই পাশের রুম থেকে ধুপধাপ শব্দ। রিয়ার মাকে মারছে। ওর জন্য ওর মা মার খাচ্ছে, এই কথা ভাবতেই রিয়ার মাথা গরম হয়ে ওঠে। দরজা খুলে বাইরে আসে। রান্নাঘর থেকে বটি হাতে তুলে নিয়ে বাপের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়।
‘খবরদার, আমার মায়ের গায়ে আর একবার হাত তুলছিসত এক কোপ দিয়ে তোর গলা নামায়ে দিমু’
রিয়ার এমন চেহারা আগে কখনো দেখে নি। ওর বাপ ভড়কে যায়। মাথা নিচু করে বাসা থেকে বের হয়ে যায়। পরদিন রিয়া কাজ করতে ফিরে যায়। রাতের ঘটনার পর আর ওর বাপের সাথে থাকা সম্ভব না। ও ঠিক করে ভয় পেলেও কাজ চালিয়ে যাবে। কিছু টাকা জমাবে। তারপর নিজের মত করে ব্যবসা করবে।
যাওয়ার আগে রিয়া একটা কাজ করে। বাসায় ওর বাপের লুকানো মদের বোতল আছে। সেখান থেকে একটা বোতল বের করে। তাতে ইঁদুর মরার বিষ মেশায়। তারপর আবার জায়গামত রেখে দেয়। ইঁদুর মরার বিষ খেলে নাকি আর মানুষ বাঁচে না। রিয়া চায় না আর ওর বাপ বাঁচুক। মা আর মেয়ে মিলে ওরা নতুনভাবে জীবন শুরু করতে চায়।
চলবে...
দ্বিতীয় পর্বঃ
তৃতীয় পর্ব:
চতুর্থ পর্বঃ
পঞ্চম পর্বঃ
ষষ্ঠ পর্ব:
সপ্তম পর্বঃ
0 মন্তব্যসমূহ