প্যারানয়েড পার্সোনালিটি ডিজঅর্ডার (PPD) একটি মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা, যা থাকলে আপনি মানুষকে অবিশ্বাস এবং সন্দেহ করতে থাকবেন। এ ধরনের মানুষ মনে করে অন্যরা তাদের ক্ষতি করতে চায়, প্রতারণা করছে, বা তাদের ঠকানোর চেষ্টা করছে, যদিও এর পেছনে তেমন প্রমাণ থাকে না। PPD-এর ফলে ব্যক্তিগত এবং সামাজিক সম্পর্ক বজায় রাখা কঠিন হয়ে পড়ে। নিচে প্যারানয়েড পার্সোনালিটি ডিজঅর্ডার সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলি দেওয়া হলো:
আরও পড়ুন:
যে রোগে ভালবাসা কমে
PPD-এর লক্ষণসমূহ
1. ভিত্তিহীন সন্দেহ: অন্যদের প্রতি অব্যাহত এবং অন্যায় অবিশ্বাস। তারা প্রায়ই মনে করে অন্যরা মিথ্যা বলছে, প্রতারণা করছে, বা তাদের প্রতি অসৎ আচরণ করছে।
2. ব্যক্তিগত তথ্য শেয়ার করতে অনিচ্ছা: তারা ব্যক্তিগত তথ্য শেয়ার করতে অনিচ্ছুক, কারণ তারা মনে করে এটি তাদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হবে।
3. নির্দোষ মন্তব্যকে হুমকি হিসেবে ব্যাখ্যা করা: অনেক সময় তারা নির্দোষ মন্তব্য বা কাজকে খারাপ বা হুমকি হিসেবে মনে করে।
4. পুরনো অভিযোগ আঁকড়ে ধরা: তারা দীর্ঘমেয়াদী আক্রোশ পোষণ করে এবং ক্ষুদ্র বা কল্পিত অপমানকেও ক্ষমা করতে অনিচ্ছুক থাকে।
5. ব্যক্তিগত আক্রমণ ধারণা করা: তারা দ্রুত রাগ বা শত্রুতা প্রকাশ করে, যখন তাদের মনে হয় কেউ তাদের চরিত্র আক্রমণ করেছে।
6. সঙ্গীর বিশ্বাসঘাতকতা নিয়ে সন্দেহ: ভিত্তিহীনভাবে সঙ্গীর প্রতি অবিশ্বাস, বারবার তাদের বিশ্বাসঘাতকতার অভিযোগ তোলে।
7. আবেগগতভাবে দূরত্ব: তারা অনেকে ঠান্ডা বা উদাসীন মনে হয়, কারণ তারা অন্যদের বিশ্বাস করতে পারে না।
আরও পড়ুনঃ
স্বৈরাচাররা যে মানসিক রোগে আক্রান্ত থাকে
এই রোগের কারণ
PPD-এর সঠিক কারণ জানা যায়নি, তবে এটি জেনেটিক এবং পরিবেশগত কারণের মিশ্রণে বিকাশ লাভ করে বলে মনে করা হয়। সম্ভাব্য ঝুঁকির কারণগুলো হলো:
পরিবারে মানসিক রোগের ইতিহাস: পরিবারে যদি স্কিজোফ্রেনিয়া বা অন্যান্য মানসিক সমস্যার ইতিহাস থাকে, তবে PPD হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়।
শৈশবের ট্রমা: শৈশবে কোনো ধরনের নির্যাতন, অবহেলা, বা ট্রমা PPD-এর বিকাশে ভূমিকা রাখতে পারে।
দীর্ঘমেয়াদী মানসিক চাপ: দীর্ঘমেয়াদী মানসিক চাপ বা উদ্বেগ দুর্বল ব্যক্তিদের মধ্যে সন্দেহের প্রবণতা বাড়িয়ে দিতে পারে।
চিকিৎসা
মনোরোগচিকিৎসা (টক থেরাপি): কগনিটিভ-বিহেভিয়োরাল থেরাপি (CBT) এবং অন্যান্য থেরাপি PPD-এর জন্য সবচেয়ে কার্যকর চিকিৎসা পদ্ধতি। থেরাপিস্ট ব্যক্তিকে বিশ্বাস গড়ে তুলতে, সন্দেহ কমাতে এবং সম্পর্ক উন্নত করতে সাহায্য করে।
ওষুধ: যদিও PPD-এর জন্য নির্দিষ্ট কোনো ওষুধ নেই, তবুও উদ্বেগ বা হতাশার লক্ষণগুলি কমানোর জন্য এন্টিডিপ্রেসেন্ট বা এন্টি-অ্যানজাইটি ওষুধ দেওয়া হতে পারে।
চিকিৎসায় চ্যালেঞ্জ
PPD-এ আক্রান্ত ব্যক্তিরা প্রায়ই চিকিৎসা নিতে অনিচ্ছুক থাকে এবং থেরাপি দেয়া কঠিন হয়ে পড়ে, কারণ তারা স্বভাবতই অবিশ্বাসী। থেরাপিস্টের সঙ্গে বিশ্বাসের সম্পর্ক গড়ে তুলতে সময় লাগতে পারে।
এই রোগ মোকাবেলার কৌশল
যারা PPD-এ আক্রান্ত কারো সঙ্গে বসবাস করেন বা এ থেকে পরিত্রাণ পেতে চান তাদের জন্য কিছু কৌশল হলো:
- বিবাদের পথ এড়িয়ে চলা এবং তাদের প্রতি অভিযোগ না তোলা।
- শান্ত এবং ধারাবাহিকভাবে যোগাযোগ বজায় রাখা।
- তাদের ব্যক্তিগত সীমারেখা সম্মান করা।
- ধৈর্য ধরে তাদের পেশাগত সাহায্য নিতে উৎসাহিত করা।
0 মন্তব্যসমূহ