প্রেমে কস্ট পাবার বৈজ্ঞানিক কারণ




বিচ্ছেদ সবার জন্যই মানসিকভাবে চ্যালেঞ্জিং, কিন্তু যারা নির্ভরশীল ব্যক্তিত্বের রোগে  (Dependent Personality Disorder - DPD) এ ভুগছেন, তাদের জন্য এই অভিজ্ঞতা বিশেষভাবে বিধ্বংসী হতে পারে। DPD-এর বৈশিষ্ট্য হলো অতিরিক্তভাবে অন্যের ওপর নির্ভর করা, ফলে  এই ব্যক্তিরা আত্মবিশ্বাস এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে খুব দুর্বল হন এবং অন্যের কাছ থেকে মানসিক ও শারীরিক সহায়তার জন্য বেশি নির্ভরশীল হয়ে পড়েন। যখন একটি সম্পর্ক ভেঙে যায়, তখন তারা প্রায়শই অনুভব করেন যেন তাদের পুরো পৃথিবী ভেঙে পড়েছে। কেন DPD আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য সম্পর্ক ভেঙে যাওয়া এত বেশি কষ্টের হয়, তা বোঝার জন্য তাদের ব্যক্তিত্ব এবং সম্পর্কের ধরনগুলো গভীরভাবে দেখতে হবে।


আরও পড়ুন: 

কেউ কেন আপনাকে ভালবাসে না?


ছেড়ে চলে যাওয়ার ভয় 


DPD-এর প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলোর মধ্যে একটি হলো পরিত্যাগের তীব্র ভয়। এই ব্যক্তিরা প্রায়ই মনে করেন যে তারা তাদের সঙ্গীর সহায়তা ছাড়া চলতে বা বাঁচতে পারবেন না। এই ভয়টি মূলত গভীরভাবে বসবাসকারী এক ধরণের বিশ্বাস থেকে আসে যে, তারা একা জীবনের চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করতে অক্ষম। যখন একটি সম্পর্ক শেষ হয়, তখন তাদের একা থাকার ভয় বাস্তব হয়ে ওঠে। সঙ্গীকে হারানো তাদের মধ্যে প্রবল অসহায়ত্ব এবং উদ্বেগ সৃষ্টি করতে পারে, কারণ তারা এমন ভবিষ্যৎ কল্পনা করতে অসুবিধা বোধ করেন যেখানে তারা আর সেই মানসিক নিরাপত্তার আশ্রয় পাবেন না।


নিজেকে না চিনতে পারা 


DPD আক্রান্ত অনেকেই তাদের ব্যক্তিত্বের বড় অংশ তাদের সম্পর্কের ওপর ভিত্তি করে গড়ে তোলেন। তাদের আত্মমূল্য প্রায়শই সঙ্গীর সাথে সম্পর্কের উপর নির্ভরশীল থাকে এবং তারা প্রায়ই সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার জন্য তাদের নিজের চাহিদা, ইচ্ছা, এবং স্বাধীনতাকে ত্যাগ করেন। যখন একটি সম্পর্ক ভেঙে যায়, তখন তারা শুধু তাদের সঙ্গীকেই হারান না, বরং তাদের আত্মপরিচয়ের একটি বড় অংশও হারান। এই পরিচয় হারানো তাদের জন্য এগিয়ে যাওয়া এবং সুস্থ হওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করা কঠিন করে তোলে।


আবেগ নির্ভর হওয়া 


DPD আক্রান্ত ব্যক্তিরা প্রায়শই নিয়মিত আশ্বাস, অনুমোদন এবং অন্যদের থেকে ভালোবাসা চায়, বিশেষ করে তাদের সঙ্গীর কাছ থেকে। তারা সঙ্গীর উপর নির্ভরশীল হয়ে ওঠে সিদ্ধান্ত গ্রহণ, সমস্যা সমাধান এবং মানসিক সান্ত্বনা পাওয়ার জন্য। বিচ্ছেদের পরে এই আবেগগত সহায়তার উৎস হঠাৎ হারিয়ে গেলে তারা ভীষণ অসহায় এবং পথভ্রষ্ট অনুভব করে। যেহেতু তাদের উপর নির্ভর করার মতো কেউ আর থাকে না, তারা বিচ্ছেদের সাথে আসা তীব্র মানসিক চাপগুলো মোকাবিলা করতে অক্ষম বোধ করে।


সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে না পারা 


DPD আক্রান্ত ব্যক্তিরা প্রায়শই নিজেরাই সিদ্ধান্ত নিতে সমস্যার সম্মুখীন হন। তারা সাধারণত তাদের সঙ্গীর মতামতের উপর নির্ভর করে অথবা তাদের দায়িত্ব নিতে অভ্যস্ত থাকে। যখন একটি বিচ্ছেদ ঘটে, তখন তারা প্রায়ই জীবন পরিচালনা করতে বা এমনকি সাধারণ সিদ্ধান্ত নিতেও অক্ষম বোধ করে। এই স্বাধীনতার অভাব তাদের অসহায়ত্বের অনুভূতিকে আরও বাড়িয়ে তোলে। জীবনে একা চলার চিন্তাই তাদের জন্য অত্যন্ত ভীতিকর হয়ে উঠতে পারে, যা তাদেরকে এগিয়ে যেতে বাধা দেয়।


প্রেমকে অতিরিক্ত গুরুত্ব দেয়া 


DPD আক্রান্ত ব্যক্তিরা প্রায়ই তাদের সম্পর্ককে আদর্শিকভাবে দেখেন এবং মনে করেন যে তাদের সঙ্গীই একমাত্র ব্যক্তি যিনি তাদের আবেগগত প্রয়োজন মেটাতে সক্ষম। এই আদর্শিক দৃষ্টিভঙ্গি বিচ্ছেদকে আরও বেশি যন্ত্রণাদায়ক করে তোলে, কারণ তারা সম্পর্কের অসামঞ্জস্য বা তাদের সঙ্গীর খুঁত মেনে নিতে কঠিন মনে করেন। সম্পর্কের দোষগুলো  দেখতে অক্ষম হওয়ার কারণে তারা প্রায়শই সঙ্গীকে ফিরে পাওয়ার চিন্তায় আবদ্ধ হয়ে পড়েন, এমনকি যদি সম্পর্কটি স্বাস্থ্যকর না হয় তবুও। বিচ্ছেদ তাদের কাছে একটি বড় ক্ষতির মতো মনে হয়, এবং ভবিষ্যতে সুখের আশা ক্ষীণ মনে হয়।


নতুন সম্পর্ক খুঁজে পাওয়ার অসুবিধা


DPD আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য বিচ্ছেদের সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং দিকগুলোর একটি হলো নতুন সম্পর্ক খুঁজে পাওয়ার ভয়। তাদের আবেগ এর  সহায়তার তীব্র প্রয়োজন একা থাকার ধারণাকে ভীতিকর করে তোলে। তারা নতুন সঙ্গী খুঁজে পেতে মরিয়া হতে পারে, কিন্তু আত্মবিশ্বাস বা সেই দক্ষতার অভাবে এটি করতে ব্যর্থ হয়। একা থাকার ভয় এবং অন্য কাউকে নির্ভর করার মতো না পাওয়ার ভয় তাদের দুঃখ, উদ্বেগ এবং হতাশার গভীরে টেনে নিয়ে যায়।


অবসাদ


অন্যের ওপর নির্ভর করার প্রবণতার কারণে DPD আক্রান্ত ব্যক্তিরা বিচ্ছেদের পরে অবসাদ এবং উদ্বেগে পড়ার ঝুঁকিতে বেশি থাকে। অসহায়ত্ব, একাকীত্ব এবং ভবিষ্যৎ নিয়ে ভয়ের অনুভূতি গুরুতর অবসাদ বা উদ্বেগজনিত সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। বিচ্ছেদের পর মানসিকভাবে তারা এতটাই দুর্বল হয়ে পড়ে যে তারা প্রায়ই এই চাপগুলো মোকাবিলা করতে পেশাগত সাহায্যের প্রয়োজন হয়।



একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ