সব দোষ কার? সাকিব আল হাসান এর ?
সাকিব আল হাসান, বাংলাদেশের নিঃসন্দেহে সর্বশ্রেষ্ঠ ক্রিকেট তারকা, যিনি কেবল দেশে নয়, সারা বিশ্বেই পরিচিত একটি নাম। ক্রিকেটে তার অসামান্য অবদান বাংলাদেশকে বিশ্বমঞ্চে প্রতিষ্ঠিত করেছে এবং তাকে কোটি মানুষের অনুপ্রেরণায় পরিণত করেছে। কিন্তু এই খ্যাতি ও গ্ল্যামারের নিচে লুকিয়ে আছে একটি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা: বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে অর্থ উপার্জনের বৈধ পথ কমে যাচ্ছে, যেখানে অবৈধ পথগুলির শাস্তি হচ্ছে না । শাস্তি না হওয়ার কারণে সাকিব আল হাসানের মত মানুষেরা অবৈধ পথে পা বাড়াচ্ছে যা জাতি হিসেবে বাংলাদেশের মানুষকে আরও বেশি অবৈধ কাজ করার উৎসাহ দেয়।
Shakib Al Hasan - Cricket Player Bangladesh
একজন তারকার অর্থনৈতিক সংগ্রাম
ক্রিকেটে সাকিবের সাফল্য তাকে আন্তর্জাতিক খ্যাতি এনে দিয়েছে, কিন্তু খ্যাতি সবসময় পর্যাপ্ত আর্থিক নিরাপত্তা এনে দেয় না। একজন উচ্চ-প্রোফাইল ব্যক্তিত্ব হিসেবে সাকিব ও চাইছেন আরও অর্থ উপার্জন করতে, নিজের ভবিষ্যৎ গড়তে এবং পরিবারের কল্যাণ নিশ্চিত করতে। প্রকৃতপক্ষে, নিজের প্রতিভা ও অর্জনকে কাজে লাগিয়ে অর্থ উপার্জন করতে চাওয়া অন্যায় কিছু নয়। অর্থনৈতিক সাফল্য একটি স্বাভাবিক ইচ্ছা এবং এটি সবারই অধিকার হওয়া উচিত, তবে অবশ্যই তা বৈধভাবে হওয়া প্রয়োজন।
আরও পড়ুনঃ
সাকিব আল হাসানের সম্পদ/ Shakib Al Hasan net worth in 2024
কিন্তু বাংলাদেশে এই ধরনের বৈধ আয়ের পথগুলি সীমিত বলে মনে হয়। অনেক সফল ব্যক্তি এখানে বাস্তবতার সম্মুখীন হন যেখানে সৎ ও সরল পথে অর্থনৈতিক উন্নতি কঠিন হয়ে পড়ে, এবং দুর্নীতি ও অবৈধ কাজের মাধ্যমে উন্নতি করা খুব স্বাভাবিক ও সামাজিক ভাবে গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠেছে।
বাংলাদেশের দুর্নীতিগ্রস্ত সমাজ
সাকিবের এই অবৈধ পথে টাকা কামানোর ইচ্ছা বাংলাদেশের একটি বড় সমস্যা। এটি প্রায়ই মানুষকে সঠিক পথ অনুসরণ করতে নিরুৎসাহিত করে, কারণ অবৈধ বা অনৈতিক উপার্জনের পথগুলি আরও সহজলভ্য হয়ে পড়ে সেগুলি সমাজে অদৃশ্য গ্রহণযোগ্য বলে মনে হয়। এদেশে মানুষরা টাকা কামানোই খুব গর্বের মনে করে, সেটা কোন পথে আসল সেটা নিয়ে খুব একটা মাথা ঘামায় না। ফলে কারো যদি অবৈধ ভাবে টাকা কামানোর সুযোগ থাকে, সে সেই সুযোগ নিতে দুইবার চিন্তা করে না। যারা সৎ থাকে তারা আসলে সুযোগের অভাবে সৎ থাকে। তাদের সামনে সুযোগ আসলে তারাও অবৈধ পথে টাকা কামাত।
দোষ কার?
এর মানে কি সাকিব এই সমাজকে অনুসরণ করতে চাওয়ার জন্য দোষী? নাকি দোষের আসল ভিত্তি হলো এই সমাজই? এই পার্থক্যটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ব্যক্তিরা তাদের কাজের জন্য অবশ্যই দায়ী, কিন্তু তারা সেই সমাজের মধ্যে বাস করে যা তাদের গড়ে তোলে। যদি তাদের চারপাশের সিস্টেম তাদের অবৈধ উপায়ে অর্থ উপার্জনে উৎসাহিত করে, বা অন্তত, এড়িয়ে যায়, তবে এটি সহজেই বোঝা যায় কেন এমনকি সৎ ব্যক্তিরাও প্রশ্নবিদ্ধ সিদ্ধান্ত নিতে দুইবার ভাববে না।
পরিবর্তনের প্রয়োজন
সাকিব আল হাসান তার বিশাল জনপ্রিয়তা ও প্রভাবের কারণে একটি অনন্য অবস্থানে আছেন। তিনি অন্যদের মতো সেই পথ অনুসরণ করতে পারেন, অথবা তিনি তার প্ল্যাটফর্মটি ব্যবহার করে সিস্টেমে পরিবর্তনের সূচনা করতে পারেন। যদিও পরবর্তীটি অনেক কঠিন, এটি তার ক্রিকেট কৃতিত্বের চেয়েও বড় ভূমিকা সমাজে রেখে যেতে পারে। কিন্তু এর জন্য আমরা তাকে বিচার করতে পারি না। সাকিবের মুল দায়িত্ব ক্রিকেট খেলা। সেটা সে বেশ ভাল ভাবেই করছে। সমাজ পরিবর্তনের দায়িত্ব সাকিবের নয়। বরং সে সমাজকে অনুসরণ করবে সেটাই খুব স্বাভাবিক। কাজেই সাকিবকে বিচার করার আগে নিজেদের সমাজটা ঠিক করুন। তাহলে সাকিবের মত মানুষেরা ঠিক ই ভাল মানুষ হয়ে উঠবে।
0 মন্তব্যসমূহ