**হাজীর বিরিয়ানি:
ঢাকার সমৃদ্ধ খাবারের ঐতিহ্যের কথা বললে, যে নামটি খাদ্যরসিকদের মনে দাগ কাটে, তা হলো হাজীর বিরিয়ানি। পুরান ঢাকার প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত এই ছোট্ট রেস্তোরাঁটি প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে তার বিখ্যাত বিরিয়ানি পরিবেশন করে আসছে, এবং স্থানীয় ও দর্শনার্থীদের কাছে একটি কিংবদন্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। হাজীর বিরিয়ানির আকর্ষণ কেবল এর স্বাদেই নয়, বরং এর ঐতিহ্য, ইতিহাস, এবং স্বাদে নিহিত রয়েছে।
### স্বাদে মিশে থাকা ইতিহাস
১৯৩০-এর দশকের শুরুর দিকে হাজী মোহাম্মদ হোসেন কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত হাজীর বিরিয়ানি প্রথমে পুরান ঢাকার কাজী আলাউদ্দিন রোডের একটি ছোট্ট দোকান হিসেবে শুরু হয়। যা একটি পারিবারিক রেসিপি থেকে শুরু করে দ্রুতই জনপ্রিয় হয়ে ওঠে তার অনন্য ও সুস্বাদু বিরিয়ানির জন্য। সাধারণত হায়দ্রাবাদি বা মুঘলাই বিরিয়ানির চেয়ে আলাদা, হাজী মোহাম্মদ হোসেনের বিরিয়ানি ছিল স্থানীয় স্বাদের সাথে মিশ্রিত যা কম মসলা ব্যবহার করে, ফলে এটি আরও সুস্বাদু এবং সকলের প্রিয় হয়ে ওঠে। প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে এই রেসিপি আজও সংরক্ষিত, সেই আসল স্বাদ অক্ষুণ্ণ রেখে।
### সাফল্যের রহস্য:
হাজীর বিরিয়ানিকে অন্যদের থেকে আলাদা করে তার সুস্বাদু উপাদান। বিরিয়ানি তৈরি হয় উচ্চমানের সুগন্ধি চাল (বেশিরভাগ সময় বাসমতি বা কালিজিরা) এবং নরম গরু বা খাসির মাংস দিয়ে, যা মুঠো মুঠো মসলা দিয়ে রান্না করা হয়। অন্যান্য বিরিয়ানির মতো জটিল মসলার ব্যবহার না করে, হাজীর বিরিয়ানি থাকে হালকা এবং সহজ। মাংসটি দই, আদা, এবং রসুনের মিশ্রণে মেরিনেট করা হয় এবং ধীরে ধীরে রান্না করা হয় যাতে এটি মুখে গলে যায়। ঘি এর ব্যবহারে খাবারে সমৃদ্ধি যোগ হয় তবে তা অতিরিক্ত না হয়ে থাকে। ঐতিহ্যবাহী রান্নার পদ্ধতির কারণে বিরিয়ানিতে একটি আলাদা ধোঁয়াটে স্বাদ পাওয়া যায়।
বেশি মসলার ব্যবহার না হওয়ায় এই বিরিয়ানি সব ঋতুতেই উপযুক্ত একটি খাবার, হোক তা দুপুরের ভারি খাবার বা রাতের মজাদার ডিনার। এই সরলতার মধ্যেও স্বাদগুলোর ভারসাম্য এমনই যে, মানুষ বারবার ফিরে আসে।
### অভিজ্ঞতা: পুরান ঢাকার ঐতিহ্য
হাজীর বিরিয়ানির সাথে জড়িত শুধু খাবার নয়, এটি পুরান ঢাকার ইতিহাস । একটি সরু, ব্যস্ত রাস্তার মাঝে অবস্থিত এই রেস্তোরাঁটি সবসময় ব্যস্ত থাকে। কোনো বিলাসিতা ছাড়া এই রেস্তোরাঁটি আপনাকে অন্যরকম এক অভিজ্ঞতার সাথে পরিচিত করিয়ে দেবে । প্রায়শই আপনি স্থানীয় লোকদের দীর্ঘ সারিতে দাঁড়িয়ে দেখবেন, তারা অপেক্ষা করছে এই কিংবদন্তি বিরিয়ানির স্বাদ নেওয়ার জন্য। বসার ব্যবস্থা খুবই সাধারণ, তবে প্লাস্টিকের ছোট স্টুলে বসে পুরান ঢাকার কোলাহলময় দৃশ্যের মধ্যে খাবার উপভোগ করতে দেখাটাও অস্বাভাবিক নয়।
যারা বসে খেতে পারেন না, তাদের জন্য এখানে টেকঅ্যাওয়ে সেবা রয়েছে, যেখানে বিরিয়ানি প্যাকেট করা হয় ঐতিহ্যবাহী কলাপাতায়, যা স্বাদ ধরে রাখে এবং পুরো অভিজ্ঞতায় একটি নস্টালজিক ছোঁয়া যোগ করে।
### খাদ্যরসিকদের জন্য অবশ্যই গন্তব্য
হাজীর বিরিয়ানি কেবল একটি খাবার নয়; এটি ঢাকার সংস্কৃতি এবং ইতিহাসের সাথে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত একটি অভিজ্ঞতা। আপনি স্থানীয় হোন বা পর্যটক, পুরান ঢাকায় আসা মানে হাজীর বিরিয়ানির স্বাদ না নিয়ে চলে যাওয়া অসম্ভব। এর স্বাদের ভারসাম্য, উপাদানের সরলতা, এবং এই কিংবদন্তি রেস্তোরাঁটির সমৃদ্ধ ঐতিহ্য ঢাকার রন্ধনশৈলীর আসল রূপ উপলব্ধি করতে ইচ্ছুক যে কারো জন্য এটি একটি অবশ্যই দেখার গন্তব্য।
### লোকেশন
**অবস্থান:** কাজী আলাউদ্দিন রোড, নাজিরা বাজার, পুরান ঢাকা
**বিশেষত্ব:** গরুর বিরিয়ানি, খাসির বিরিয়ানি
**সময়সূচি:** সাধারণত দুপুরের পর রেস্তোরাঁ খোলে এবং যতক্ষণ বিরিয়ানি শেষ না হয় ততক্ষণ খোলা থাকে (প্রতিদিন তাজা বিরিয়ানি তৈরি হয়, তাই বেশিরভাগ দিন বিকেলের আগেই বিক্রি শেষ হয়ে যায়)। ভিড় এড়াতে তাড়াতাড়ি যাওয়া উত্তম।
**মূল্য:** সাশ্রয়ী, যা ছাত্র থেকে শুরু করে পরিবার সকলের জন্য উপযুক্ত।
আরও পড়ুনঃ
পুরান ঢাকার বিখ্যাত রেস্টুরেন্ট
পুরান ঢাকায় ঘোরার জায়গা /puran dhaka historical place
0 মন্তব্যসমূহ