ভয়ঙ্কর ভূতের গল্প ৭

মধ্যরাতের ভোজ





নাফিস কখনো সোহানার মতো কাউকে দেখেনি। সে শান্ত, গম্ভীর, আর তার মধ্যে এমন এক ধরণের রহস্য ছিল যা তাকে অন্য মেয়েদের থেকে আলাদা করেছিল। তার বন্ধুরা যখন সোহানার কাছে যেতে সাহস পেত না, নাফিস ছিল নির্ভয়। তার বিশ্বাস ছিল যে, ধৈর্য ধরলে একদিন সোহানার মন জয় করতে পারবে।


"তুমি অন্যদের মতো নও, সোহানা। এটাই তোমার প্রতি আমার টান," সাহস করে বলল প্রথম দিন যখন সে সোহানার সাথে কথা বলেছিল। সোহানা বিনয়ের সাথে হেসে বলেছিল, "তুমি ভুল করছ," তারপর দ্রুত চলে গিয়েছিল। এখানেই শেষ হওয়া উচিত ছিল।


কিন্তু তা হয়নি।


নাফিস বারবার তাকে অনুসরণ করতে থাকল—মেসেজ পাঠানো, ক্লাসের বাইরে অপেক্ষা করা, অ্যাসাইনমেন্টে সাহায্য করার প্রস্তাব। সে আগ্রাসী ছিল না, কিন্তু সোহানা লক্ষ্য করেছিল। প্রতিদিন সে আরও দূরে সরে যাচ্ছিল, কিন্তু নাফিস আরও জেদি হয়ে উঠছিল।


এক বিকেলে, সোহানা অবশেষে তার মতামত জানায়। তারা তখন হোস্টেলে ফিরছিল, আর নাফিস আবার তাকে প্রস্তাব দিয়েছিল।


"নাফিস," সোহানা গভীর ও দৃঢ় কণ্ঠে বলেছিল, "তোমার থামা উচিত। আমি অন্য মেয়েদের মতো নই। তুমি জানো না তুমি কী করছ।"


তার কথা ছিল রহস্যময়, কিন্তু তার স্বরে এমন কিছু ছিল যা শীতলতা অনুভব করায়। তার সাধারণত উষ্ণ বাদামী চোখ তখন অন্ধকার, প্রায় শীতল মনে হচ্ছিল। প্রথমবারের মতো, নাফিস দ্বিধায় পড়েছিল।


"তুমি কী বলতে চাচ্ছ?" সে জিজ্ঞেস করল, পরিস্থিতির চাপকে উপেক্ষা করে হাসার চেষ্টা করে।


"তুমি শুনছ না," সোহানা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল, "এবং এটা তোমার জন্য সমস্যা হবে।"


নাফিস নার্ভাসভাবে হাসল। "আমি তোমাকে পছন্দ করি, সোহানা। আমি অন্য কিছু নিয়ে চিন্তা করি না।"


সোহানা থেমে গিয়ে তার দিকে ফিরে তাকাল। "যদি তুমি না থামো, তাহলে তোমার সাথে কিছু খারাপ হবে। আমার পরিবার... তারা অন্যদের মতো নয়। তারা... বিপজ্জনক।"


নাফিস ভেবেছিল সে শুধু তাকে ভয় দেখানোর চেষ্টা করছে, কিন্তু সে এত সহজে ছাড়তে চায়নি। সে হালকা করে হেসে উড়িয়ে দিয়েছিল।


সেই রাতেই, সে বুঝতে পারল যে সে ভুল করেছিল।


---


রাতটা ছিল অস্বাভাবিকভাবে শান্ত। নাফিস বিছানায় শুয়ে ছাদের দিকে তাকিয়ে ছিল, সোহানার সতর্কবার্তাটি কিছুতেই মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলতে পারছিল না। সে নিজেকে বোঝানোর চেষ্টা করছিল যে সোহানা বাড়িয়ে বলেছে, কিন্তু তার কথা বলার ভঙ্গিতে এমন কিছু ছিল যা তাকে অস্থির করে তুলেছিল।


হঠাৎ দরজায় একদম মাঝরাতে কড়া নাড়ার শব্দে সে চমকে উঠল। রাত ১টা বাজে, ফোনে দেখাল। এত রাতে কে আসতে পারে?


সতর্কভাবে, সে বিছানা থেকে উঠে দরজার ফাঁক দিয়ে একটু খোলার চেষ্টা করল, মনে করছিল হয়তো কোনো বন্ধু বা হলের কর্মচারী হবে। কিন্তু বাইরে দাঁড়িয়ে ছিল তিনজন অচেনা মানুষ। তাদের মুখ অন্ধকারে ছায়াময় ছিল, কিন্তু তাদের উপস্থিতি ছিল শীতল ও ভয়ঙ্কর।


“আপনারা কারা?” নাফিস ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞেস করল।


কথা না বলে, তারা দরজা ঠেলে খুলে ঘরে ঢুকে পড়ল। নাফিস পিছু হটল, আতঙ্কে জমে গিয়েছিল।


“আপনারা কে?” তার কণ্ঠ কাঁপছিল।


তাদের মধ্যে একজন এগিয়ে এল, হালকা আলোতে তার মুখ দেখা যাচ্ছিল। সে ছিল বয়স্ক একজন পুরুষ, তার চোখ ছিল ফাঁপা ও শিকারীর মতো। নাফিস তাকে চিনতে পারল—সোহানার বাবা।


“আমরা তোমাকে সতর্ক করেছিলাম,” বৃদ্ধ গর্জন করে বলল, তার কণ্ঠ নিচু এবং ভয়ঙ্কর।


নাফিসের কিছু বলার আগেই অন্য দুইজন, যারা ছিল সোহানার মতো দেখতে এক মহিলা ও এক যুবক, তাকে মাটিতে চেপে ধরল। তাদের শক্তি ছিল অস্বাভাবিক, আর নাফিস যতই লড়াই করুক, সে মুক্ত হতে পারল না।


“অনুগ্রহ করে, আমাকে ছেড়ে দিন! আমি দুঃখিত!” নাফিস আতঙ্কে চিৎকার করে উঠল।


মহিলাটি নিচু হয়ে তার মুখের কাছাকাছি এল। তার চোখ জ্বলজ্বল করছিল, আর তার ঠোঁটের ফাঁক থেকে বেরিয়ে এল ধারালো, কাঁটাযুক্ত দাঁত।


"আমরা তোমাকে সতর্ক করেছিলাম," সে ফিসফিস করে বলল, "কিন্তু তুমি শোনোনি।"


নাফিস চিৎকার করে লাথি মারার চেষ্টা করল, কিন্তু কোনো লাভ হলো না। সোহানার বাবা হাত উঠিয়ে অন্যদের দিকে ইঙ্গিত দিল। তারপর তারা একসাথে নাফিসের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ল, তাদের দাঁত তার মাংসে গেঁথে গেল। 


ব্যথা তৎক্ষণাৎ এবং প্রচণ্ড ছিল। তারা শুধু তাকে কামড়াচ্ছিল না—তারা তাকে খাচ্ছিল। নাফিস নিজেকে ক্রমশ দূরে সরে যেতে অনুভব করল, যন্ত্রণার মধ্য দিয়ে সে বুঝতে পারল সে বেঁচে থাকবে না। তার দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে আসছিল, এবং শেষ মুহূর্তে সে দেখল সোহানা দরজার সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছে। সে নির্বিকারভাবে তার পরিবারের এই ভোজ দেখছিল।


অন্ধকার তাকে গ্রাস করার আগ মুহূর্তে, নাফিস বুঝতে পারল সে কী ভুল করেছিল। সোহানা অন্য মেয়েদের মতো নয়—তার পরিবারও অন্য পরিবারের মতো নয়।


তারা ছিল শিকারী।


---


পরদিন সকালে, নাফিস ছিল অদৃশ্য, যেন সে কখনো ছিলই না। শুধু ফিসফিসিয়ে তার নাম উচ্চারিত হচ্ছিল ক্যাম্পাসের আনাচে-কানাচে। সোহানা তার ক্লাসে গিয়ে বসল, আগের মতো শান্ত, কিছুই না ঘটার মতো। কেউ কিছু সন্দেহ করেনি।


আসলে, কে বিশ্বাস করবে যে মানুষরূপী দানবরা তাদের মধ্যে লুকিয়ে থাকতে পারে, যাদের তারা চিনত বলে ভাবত?


সোহানা ভালো করেই জানত। কিছু লোকের কৌতূহল তাদের জন্য বিপদ ডেকে আনে। আর যখন তারা সতর্কবার্তা শোনে না, তখন তারা হয়ে যায় পরিবারের খাদ্য।


আর পরিবার সবসময় ক্ষুধার্ত।

ভয়ঙ্কর ভূতের গল্প 6



একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ