ডায়রিয়া অনেক সময় কষ্টদায়ক হতে পারে এবং সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ না করলে শরীরের পানির ঘাটতি ও জটিলতার সৃষ্টি হতে পারে। ডায়রিয়ার সময় প্রধান লক্ষ্য হলো শরীরকে পর্যাপ্ত পানি সরবরাহ করা এবং এমন খাবার খাওয়া যা হজমের জন্য সহজ। ডায়রিয়া প্রতিরোধে কী ধরনের খাদ্য গ্রহণ করা উচিত এবং কী এড়িয়ে চলা উচিত তা নিয়ে আলোচনা করা হলো।
#### **পর্যাপ্ত পানীয় গ্রহণ করুন**
ডায়রিয়া প্রতিরোধে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো শরীরকে পর্যাপ্ত পানি দেওয়া, কারণ এর ফলে শরীর প্রচুর পরিমাণে তরল এবং ইলেকট্রোলাইট হারায়। পানীয় গ্রহণের কিছু ভালো পদ্ধতি হলো:
1. **ওরাল রিহাইড্রেশন সলিউশন (ORS):**
ওআরএস হলো একটি মিশ্রণ যা পরিষ্কার পানি, চিনি, এবং লবণ দিয়ে তৈরি হয়। এটি শরীরের তরল ও ইলেকট্রোলাইটের ঘাটতি পূরণে সহায়ক, যা শরীরকে ডিহাইড্রেশন থেকে রক্ষা করে।
2. **ডাবের পানি:**
ডাবের পানিতে প্রাকৃতিক ইলেকট্রোলাইট থাকে যা শরীরের পানির ঘাটতি পূরণে সহায়ক এবং অনেকের কাছে এটি সাধারণ পানির তুলনায় সুস্বাদু হতে পারে।
3. **সুপ বা পরিষ্কার শোরবা:**
হালকা সবজি বা মুরগির স্যুপ পানি এবং পুষ্টি সরবরাহ করে। এটি হজমের জন্য সহজ এবং পাকস্থলীকে শান্ত করে।
আরও পড়ুনঃ
ডেঙ্গু রোগের কারণ ও লক্ষণ
প্রতিদিন কতটা পানি পান করা উচিত?
তারুণ্য ধরে রাখার উপায়
#### **BRAT ডায়েট: পেটের জন্য সহনশীল খাদ্য**
ডায়রিয়ার সময় এমন খাবার খাওয়া জরুরি যা হালকা এবং সহজে হজম হয়। এ ক্ষেত্রে সাধারণত BRAT ডায়েট প্রস্তাবিত হয়:
1. **কলা:**
কলা হলো পটাসিয়ামের একটি সমৃদ্ধ উৎস, যা ডায়রিয়ার সময় শরীরের ইলেকট্রোলাইটের ঘাটতি পূরণে সাহায্য করে। এটি সহজে হজমযোগ্য এবং মলকে শক্ত করতে সহায়ক।
2. **ভাত:**
সাদা ভাত একটি সাধারণ কার্বোহাইড্রেট যা মলকে বেঁধে রাখতে সহায়ক এবং হজমতন্ত্রকে শান্ত করে। এটি পাকস্থলীর উপর চাপ ছাড়াই শক্তি প্রদান করে।
3. **আপেল সস:**
আপেল সসে পেকটিন থাকে, যা একটি দ্রবণীয় ফাইবার। এটি অন্ত্রের অতিরিক্ত পানি শোষণ করে মলকে শক্ত করতে সহায়তা করে। এটি হালকা ও সহজে হজমযোগ্য।
4. **টোস্ট:**
শুকনো টোস্ট বা বিস্কুট সহজে হজমযোগ্য এবং পেটের জন্য নিরাপদ বিকল্প। এগুলো কার্বোহাইড্রেট সরবরাহ করে যা শরীরকে শক্তি প্রদান করে।
#### **অন্যান্য সহজে হজমযোগ্য খাবার**
BRAT ডায়েট ছাড়াও কিছু অন্যান্য খাবার রয়েছে যা ডায়রিয়া উপশমে সহায়ক:
- **সেদ্ধ আলু:**
সাদা সেদ্ধ আলু কম ফাইবারযুক্ত এবং হজমের জন্য সহজ। এটি পটাসিয়ামের মতো প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহ করে এবং শরীরকে শক্তি দেয়।
- **প্লেইন দই (প্রোবায়োটিক সহ):**
প্রোবায়োটিক সমৃদ্ধ দই অন্ত্রের ভালো ব্যাকটেরিয়ার ভারসাম্য পুনঃস্থাপন করে। এটি হজমতন্ত্রকে শান্ত করে এবং দ্রুত সেরে উঠতে সহায়ক।
- **সেদ্ধ গাজর:**
সেদ্ধ গাজর হালকা এবং পেটের জন্য সহজে হজমযোগ্য, যা প্রয়োজনীয় ভিটামিন ও মিনারেল সরবরাহ করে।
#### **এড়িয়ে চলা উচিত এমন খাবার ও পানীয়**
কিছু খাবার ডায়রিয়া উপশমে সহায়ক হলেও, অন্য কিছু খাবার পরিস্থিতিকে আরও খারাপ করতে পারে বা পেটের জন্য বিরক্তিকর হতে পারে। নিচের খাবারগুলো এড়িয়ে চলা উচিত:
- **দুধ এবং দুগ্ধজাত খাবার (প্রোবায়োটিক দই ছাড়া):**
ডায়রিয়ার সময় শরীর অস্থায়ীভাবে ল্যাকটোজ অসহনশীল হয়ে যেতে পারে, যার ফলে দুধ বা দুগ্ধজাত খাবার খেলে সমস্যা বাড়তে পারে। প্রোবায়োটিক দই খেতে পারেন তবে অন্যান্য দুগ্ধজাত খাবার এড়িয়ে চলুন।
- **চর্বিযুক্ত ও ভাজা খাবার:**
এই ধরনের খাবার হজমে সমস্যা তৈরি করতে পারে এবং ডায়রিয়া আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে, কারণ এগুলো হজমের জন্য কঠিন।
- **মশলাদার খাবার:**
মশলা পাকস্থলীর ওপর বিরক্তিকর প্রভাব ফেলে, যা ডায়রিয়ার সময় অস্বস্তি বাড়ায়।
- **ক্যাফেইন ও অ্যালকোহল:**
এই পানীয়গুলো ডিহাইড্রেশন বাড়াতে পারে, যা ডায়রিয়ার উপসর্গকে আরও খারাপ করে তুলতে পারে। তাই কফি, চা, সোডা ও অ্যালকোহল থেকে বিরত থাকুন।
- **উচ্চ ফাইবারযুক্ত খাবার:**
কাঁচা সবজি ও শস্যজাতীয় খাবার ডায়রিয়ার সময় হজমে সমস্যা তৈরি করতে পারে, কারণ এগুলো অন্ত্রে দ্রুত চলাচল বাড়ায়।
#### **কখন চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন**
যদি ডায়রিয়া কয়েক দিনের বেশি স্থায়ী হয়, বা আপনি প্রচণ্ড পানির ঘাটতির লক্ষণ যেমন চরম তৃষ্ণা, শুষ্ক মুখ, কম প্রস্রাব হওয়া, বা মাথা ঘোরা লক্ষ্য করেন, তবে অবশ্যই চিকিৎসা নিন। দীর্ঘমেয়াদি ডায়রিয়া শরীরের পানির ঘাটতি তৈরি করতে পারে, যা চিকিৎসার প্রয়োজন হতে পারে।
ডায়রিয়ার প্রতিরোধে প্রধান কাজ হলো পর্যাপ্ত পানি গ্রহণ এবং হালকা, সহজে হজমযোগ্য খাবার খাওয়া। BRAT ডায়েট অনুসরণ করে এবং ক্যাফেইন, অ্যালকোহল এবং মশলাদার খাবার এড়িয়ে আপনি দ্রুত সুস্থ হতে পারেন। তবে ডায়রিয়া দীর্ঘস্থায়ী হলে বা লক্ষণগুলো খারাপ হলে, দ্রুত একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত।
0 মন্তব্যসমূহ