পুরান ঢাকার বিখ্যাত বিরিয়ানি এবং একটি প্রেম -১

 

সকাল  বেলার পুরান ঢাকা । মজাদার খাবারের গন্ধ। মাকড়সার মত অলিগলিতে তীব্র যানজট। এক একটা বাড়ি যেন কত ইতিহাস । কান পাতলেই শোনা যাবে। এমনই একটি বাড়ির চিলেকোঠায় রানা থাকে। এখানকার অধিকাংশ বাসিন্দাদের মত রানার বনেদি কোন ইতিহাস নেই। এতিম ছেলে। কপালের ফেরে অনেকটা বলতে গেলে বুড়িগঙ্গায় ভাসতে ভাসতে এই নওয়াব পুরে এসে ঠাই হয় ওর। তারপর বেঁচে থাকার অজুহাতে অন্ধকার জগতে জড়িয়ে পরা। এখন নওয়াব পুর ঘাটের একছত্র অধিপতি সে। তার কথায় ঘাটে সন্ধে নামে। রাত পেরিয়ে ভোর হয়। ঘাট কে কেন্দ্র করে যাদের জীবিকা অর্জন করতে হয় তাদের কাছে রানার তাই অন্যরকম একটা কদর আছে। রানা বিষয়টা বোঝে। কিন্তু তাই বলে যা ইচ্ছে তাই করে বেরানোর মত বেপরোয়া ছেলে সে নয়। নিজের ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার জন্য যতটুকু কঠোর হতে হয় ঠিক ততটুকুই। বাকি সময় আর দশটা বাঙালি ছেলের সাথে ওর আলাদা কোন তফাত ধরা পরে না । 


রানা সাধারণত দুপুর ১২ টা  পর্যন্ত ঘুমায়। কাল ঘাটে একটা ঝামেলা হওয়াতে বলতে গেলে সাড়া রাত ই বাইরে থাকা লেগেছে। সকালে রুমে ফিরে ফ্রেশ হয়ে একটু ঝিমাচ্ছিল। ঘুম আসছে অনেক। কিন্তু এখন ঘুমানো যাবে না। একটু পরেই একটা জরুরি কাজে বাইরে যেতে হবে। এখন ঘুমালে কাজটা মিস হয়ে যাবে। রানা তাই জোর করে জেগে থাকার চেষ্টা করছিল। এমন সময় দরজায় কড়া নড়ল। রানা ক্লান্ত শরীরে দরজা খুলল। রানার বন্ধু সাগর এসেছে। 

-কিরে জেগে আছিস?

-হুম। আয় ভেতরে আয়। 

-আমিত ভেবেছিলাম তোকে ঘুমে পাব। ভেতরে ঢুকে বসতে বসতে বলল সাগর। রানা বিছানার উপর গা এলিয়ে দিয়ে বলল ,   “ আর ঘুম। এই ঝামেলা সেই ঝামেলা’ বলে হাই তুলতে লাগল। 

-রাতে ঘুমাস নি?

-নাহ বাইরে ছিলাম একটু।

-কেন ? কোন ঝামেলা?

-হম। একটা মার্ডার হইছে কালকে রাতে  ঘাটে।

-কে খুন হল আবার?

-চিনি  না। বাইরে থেকে অস্ত্র নিয়ে ঘাট দিয়ে এলাকায় ঢুকতে চাচ্ছিল। পরে আমার ছেলে পেলের হাতে ধরা পরে যায়। সেখান থেকে গণ্ডগোল। তারপর খুন।

- তাই বলে খুন খারাবি হয়ে যাবে? 

- আরেহ তুই এটা নিয়ে মাথা ঘামাস না।

- এমন ভাবে বলছিস যেন মানুষ খুন হওয়া তোর কাছে কোন বেপার না। তুই চাইলেই যখন তখন লাশ ফেলে দিতে পারিস।  


রানা হাসল। সাগর এই বিষয়ে আর কথা বাড়াল না। রানার অন্ধকার জগত থেকে সে যতটা সম্ভব দুরে থাকার চেষ্টা করে। রানার সাথে ওর যা যোগাযোগ শুধুমাত্র বন্ধুত্বের খাতিরে। ওদের বন্ধুত্বের দিন গুলো খুব সুন্দর ছিল। সাগর সে মায়া এখনো ছাড়তে পারে না। তাই মাঝে মধ্যে খোঁজ নিতে আসে। সাগর অন্য প্রসঙ্গে কথা বলে, 


- আজকের পত্রিকা পড়েছিস?

-না। আমি আবার কবে থেকে পত্রিকা পড়ি তোর মনে হল। কেন আমাকে নিয়ে কিছু লিখছে নাকি?

-তোকে নিয়ে লিখতে যাবে কেন?

-নাহ এলাকার সন্ত্রাসী হিসেবে পত্রিকায় নাম আসলেও আসতে পারে। তাই বললাম আর কি।

-তোর কথা কিছু লিখে নি। কিন্তু সপ্নার কথা লিখেছে। সপ্না ফিরে এসেছে। 

বলে সাগর রানার সামনে পত্রিকাটা খুলে দেয়। রানা পত্রিকায় চোখ রাখল। সাগর দেখল রানা ঘামছে। যে মানুষের কাছে মানুষ খুন হওয়া সামান্য ঝামেলা, সে একটি মেয়ের ফিরে আসার খবরে টপ টপ করে ঘামতে শুরু করে। পৃথিবীর হিসেব আসলেই বোঝা খুব কঠিন। 


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ